রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস নিউজ ডেস্ক:
লকডাউনে কর্মহীন নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে দুই সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। সংস্থা দুটির ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই বরাদ্দের কথা জানেই না নিম্নআয়ের মানুষেরা। করপোরেশন সংশ্লিষ্টদের কাছে সাহায্য চেয়ে ফিরে আসার অভিযোগও করেছেন অনেকে। দুই সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর কার্যালয় ও আঞ্চলিক নির্বাহী অফিসগুলোতে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি তার পুরানো ৭৫টি ওয়ার্ড ও ১০টি অঞ্চলের জন্য ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রত্যেক আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কাউন্সিলরদের সহযোগিতায় এই অর্থ থেকে খাদ্য সহায়তা পাবেন নিম্নআয়ের মানুষ। তবে এজন্য নির্বাহী কর্মকর্তা বা কাউন্সিলরের কাছে খাদ্য সহায়তা চেয়ে মানুষকে যেতে হবে। তবে কাউন্সিলরা জানিয়েছেন, তারা এখনও এই ৫০ লাখ টাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাদের কাছে সেই টাকা এখনও পৌঁছেনি।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির ২৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লকডাউনের আগে আমাদের কাছে ৪২ শিশুর জন্য শিশু খাদ্য এসেছে। সেখানে ৯ ধরনের খাবার ছিল। আমরা সেগুলো বিতরণ করেছি। এছাড়া আমার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছি। এই লকডাউনে এখনও করপোরেশন থেকে কোনও অর্থ পাইনি। তবে এখনও মানুষের ঘরে খাদ্য রয়েছে। একজন রিকশাচালকের ঘরেও ৭-১০ দিনের খাদ্য মজুত থাকে। আর আমরা চাই মানুষ লকডাউন পালন করুক। তাহলে করপোরেশনের পক্ষ থেকে তাদের ঘরে আমরা খাদ্য পৌঁছে দিবো।
সকালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের খিলগাঁও এলাকায় অবস্থিত অঞ্চল-২ এর অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেছে সেখানে কোনও মানুষ নেই। তবে কাউন্সিলররা জানিয়েছেন প্রতিনিয়ত তাদের কাছে খাদ্য সহায়তা চেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষেরা আসছেন। কিন্তু তাদের কাছে এখনও কোনও বরাদ্দ পৌঁছায়নি। আর যে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যে পরিমাণ মানুষ আসে তাদের সেভাবে সহায়তা দিতে পারছেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যাদের খাদ্য সহায়তা প্রয়োজন তাদের জন্য আমাদের ৭৫টি ওয়ার্ড বা ১০টি অঞ্চলের বিপরীতে ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি। কারও সহায়তার প্রয়োজন হলে আমাদের কাউন্সিলরদের মাধ্যমে বা সরাসরি আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছে সহায়তা চাইলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা এই বরাদ্দ থেকে সহায়তা দেবেন। এছাড়া আমরা আড়াই লাখ মাস্ক, আড়াই লাখ হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও আড়াই লাখ সাবান বরাদ্দ দিয়েছি। প্রয়োজন হলে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে।
একইভাবে উত্তর সিটি করপোরেশনও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য বরাদ্দ রেখেছে। সংস্থাটির মেয়র আতিকুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত প্লাটফর্ম ‘সবাই মিলে সবার ঢাকা’র পক্ষ থেকে অসহায় ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এরই মধ্যে তার সংস্থা প্রতিটি কাউন্সিলরের জন্য ৬৪ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দিয়েছেন। এই অর্থ দিয়ে তারা শিশু খাদ্যসহ নিম্নআয়ের মানুষকে সহায়তা দেবেন। এছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ লাখ টাকা ও এক হাজার মেট্রিক টন চল বরাদ্দ এসেছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এগুলো বিতরণ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন, আসলে গত বছর যখন লকডাউন ছিল তখন কোনও কিছুই চলতো না। মানুষের কাজ করার সুযোগ ছিল না। এখন অনেকেই কিছু কাজকর্ম করার সুযোগ পাচ্ছে। সে কারণে আগের মতো খাদ্য সহায়তা চাওয়ার মানুষ তেমন এখন পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরও আমরা প্রস্তুত। কেউ সহায়তা চাইলে আমরা পৌঁছে দিচ্ছি।
সকালে খিলগাঁও রেলগেট ও শাজাহানপুর এলাকায় নিম্নআয়ের বহু মানুষকে হাত পাততে দেখা গেছে। তারা সবাই রেলওয়ে বস্তিতে থাকেন। তাদের একজন শাহানারা বেগম। জানতে চাইলে তিনি বলেন, যানজটের মধ্যে রাস্তায় গামছা, খেলনাসহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন কোনও যানবাহন নেই। রাস্তায় মানুষও নেই। তাই বেচা-বিক্রি নেই। বাসায় খাবার নেই। কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে জানানো হয়েছে, কোনও বরাদ্দ আসেনি। তাই রাস্তায় হাত পাততে নেমেছি।
সিরাজুল ইসলাম নামে এক ভিক্ষুক বলেন, প্রতিদিন ভিক্ষা করে যা আয় হতো তা দিয়েই ৫ সদস্যের পরিবার চলতো। এখন ভিক্ষাও পাওয়া যাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে মানুষ নেই।সিটি করপোরেশনের অফিসে গিয়েছি কয়েকবার, কোনও সহায়তা পাইনি। লকডাউন বাড়ানো হলে যদি খাদ্য সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে। সূত্র্র:বাংলাট্রিবিউন।
ভয়েস/জেইউ।